Tuesday, July 28, 2020

সৈয়দ মোদি হত্যাকাণ্ডের ৩২ বছর পরও মেলেনি অনেক প্রশ্নের জবাব




সৈয়দ মোদি হত্যাকাণ্ডের
৩২ বছর পরও মেলেনি
অনেক প্রশ্নের জবাব


নির্মলকুমার সাহা


(‌১৯৮৮-‌র ২৮ জুলাই। ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের এক অভিশপ্ত দিন। পুরুষ সিঙ্গলসে ৮ বারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সৈয়দ মোদি গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে। আজ ৩২ বছর পরও যা পুরনো ব্যাডমিন্টন প্রেমীদের কষ্ট দেয়।)‌



প্রতিদিনের মতো সেদিনও লখনৌর কে ডি সিং বাবু স্টেডিয়ামে বিকেলে অনুশীলন করতে গিয়েছিলেন সৈয়দ মোদি। সাধারণত অনুশীলনে সঙ্গী হতেন স্ত্রী অমিতা মোদি। তিনিও বিখ্যাত ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। কিন্তু ১৯৮৮-‌র ২৮ জুলাইয়ের সেই অভিশপ্ত বিকেলে অমিতা সঙ্গে ছিলেন না। সৈয়দ মোদি ছিলেন একা। ওঁদের শিশু কন্যার বয়স তখন মাত্র ২ মাস। ফলে অনেকদিন ধরেই অনুশীলনে অনিয়মিত ছিলেন অমিতা। অনুশীলন শেষে স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে প্রতিদিনই সৈয়দ মোদি যেতেন সামনের এক দোকানে স্ন্যাকস খেতে। সেদিনও যাচ্ছিলেন সেদিকেই। কিন্তু তার আগেই স্টেডিয়ামের গেটের কাছে যেতেই কাছাকাছি এসে দাঁড়ায় একটা মারুতি গাড়ি। গাড়িতে আরোহী ছিলেন ৬ জন। মোদি আরও একটু এগোন। গাড়ির আরও কাছাকাছি পৌঁছে যান। তখনই গাড়ির ভেতর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসে তাঁকে লক্ষ্য করে। গুলিবিদ্ধ সৈয়দ মোদি রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন রাস্তায়। গুলির শব্দ শুনে আরও যাঁরা স্টেডিয়াম থেকে বেরোচ্ছিলেন ছুটে আসেন। আশপাশের মানুষরাও জড়ো হন। ততক্ষণে আততায়ীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গেই দেশের অন্যতম সেরা ব্যাডমিন্টন তারকাকে নিয়ে যাওয়া হয় কাছের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও কিছু করে উঠতে পারেননি। জানিয়ে দেন, হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু ঘটেছে!‌ মোদির বুকে চারটি গুলি লেগেছিল। যার মধ্যে একটা হৃদযন্ত্র বিদ্ধ করেছিল।
মৃত্যু কখন কীভাবে আসে, কেউ জানে না!‌ সেদিন তো সৈয়দ মোদির লখনৌয়ে থাকারই কথা ছিল না। দিল্লিতে সেদিনই ছিল অর্জুন পুরস্কার প্রাপকদের এক সম্মেলন। ওই সম্মেলনে থাকার কথা ছিল ‘‌অর্জুন’‌ সৈয়দ মোদিরও। যাননি ‘‌ব্যক্তিগত কারণ’‌ দেখিয়ে। যাঁরা সৈয়দ মোদিকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা জানেন আপাদমস্তক ভদ্র, নম্র, শান্ত ওই খেলোয়াড়ের কোনও শত্রু থাকার কথা নয়। তবু কেন, কারা কেড়ে নিয়েছিলেন ২৬ বছরের চনমনে ওই তরুণের জীবন?‌
অভিযোগ উঠেছিল এই খুনের পেছনে রয়েছেন বিশিষ্ট রাজনীতিক সঞ্জয় সিং ও সৈয়দ মোদির স্ত্রী অমিতা। তা নিয়ে মামলা, পাল্টা মামলা চলেছিল অনেকদিন। গড়িয়েছিল সি বি আই পর্যন্ত। কিন্তু আমাদের দেশে যা হয়ে থাকে, একটা সময় সবই ধামাচাপা পড়ে যায়। ওটাও তাই হয়েছিল। তদন্তের ফল একটা ‘‌বিগ জিরো’‌। পরে একসময় সঞ্জয় সিংয়ের হাত ধরে রাজনীতিতেও চলে আসেন অমিতা। ‌‌‌১৯৯৫ সালে দু’‌জনে বিয়েটাও সেরে ফেলেন। শুধু অমিতার নয়, সঞ্জয়েরও ওটা ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। সঞ্জয়ের আগের স্ত্রী গরিমা ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিংয়ের আত্মীয়া। তাঁর রাজনৈতিক প্রভাবও তখন কম ছিল না। ফলে সঞ্জয়-‌গরিমার ডিভোর্স নিয়েও অনেক জল ঘোলা হয়েছিল। তাই সঞ্জয়ের সঙ্গে অমিতার বিয়ে হতে একটু দেরিও হয়েছিল। সঞ্জয়ের সঙ্গে এ দল, ও দল করে এখনও রাজনীতিতেই আছেন অমিতা।
লখনৌর ক্রীড়ামহলে সৈয়দ মোদি ছিলেন প্রবল জনপ্রিয়। ওখানকার ক্রীড়ামহল এই হত্যাকাণ্ড সহজে মেনে নিতে চাননি। কিন্তু মেনে নিতে হয়েছিল রাজনৈতিক চাপ ও প্রভাবের কাছে।
সৈয়দ মেহদি হাসান জাইদি (Syed Mehdi Hassan Zaidi) ‌‌‌‌‌এই নামটি ভারতীয় ব্যাডমিন্টন মহলে একেবারেই অপরিচিত। আসলে সৈয়দ মোদির পরিবারের দেওয়া পুরো নাম ছিল এটাই। শৈশবে গ্রামের ‌‌‌‌‌প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির সময় এক শিক্ষকের ভুলে ‘‌Mehdi’‌ হয়ে যায় ‘Modi‌’‌.‌ পরে আর ওটা সংশোধন করেননি। ফলে সৈয়দ মোদি নামেই সর্বত্র পরিচিত। জন্ম উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর জেলার সরদার নগরের (‌Sardarnagar) ‌‌‌‌লাগোয়া কর্মা (Karma‌)‌ ‌‌‌গ্রামে, ১৯৬২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। সৈয়দ মোদির বাবা (‌Syed Meer Hassan Zaidi) ‌‌‌কাজ করতেন সরদার নগরে একটি চিনি কারখানায়। তাঁর ৮ সন্তানের (‌৬ পুত্র, ২ কন্যা)‌ মধ্যে সৈয়দ মোদি সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই সৈয়দ মোদির খেলাধুলোয় ছিল প্রবল আগ্রহ। কিন্তু ছেলের খেলাধুলোর জন্য বাড়তি টাকা খরচ করা বাবার পক্ষে সম্ভব ছিল না। মোদির খেলাধুলো নির্ভর করত দাদাদের দেওয়া টাকার ওপর।
১৪ বছর বয়সে ১৯৭৬ সালে জুনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন মোদি। ওই বছর থেকেই এন আই এস পাতিয়ালার চিফ ব্যাডমিন্টন কোচ পি কে ভান্ডারির (Pushp Kumar Bhandari‌)‌ কাছে কোচিং নিতে শুরু করেন। ‌‌‌‌‌১৯৮২ থেকে কোচিং নিয়েছেন ভারতের তখনকার জাতীয় কোচ দীপু ঘোষের কাছে।
১৯৮০ সালে সিনিয়র ন্যাশনালে প্রথম খেলতে নেমেই সিঙ্গলসে চ্যাম্পিয়ন। সেই থেকে টানা ১৯৮৭ পর্যন্ত জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মোদি। অর্জুন পুরস্কার পান ১৯৮১ সালে। আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনে তাঁর সেরা সাফল্য ১৯৮২ সালে কমনওয়েলথ গেমসে সিঙ্গলসে চ্যাম্পিয়ন। এছাড়া সিঙ্গলসে আরও তিনটি আন্তর্জাতিক খেতাব জিতেছেন। ২ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনালে, ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে। একবার (‌১৯৮৫)‌ চ্যাম্পিয়ন ইউ এস এস আর ইন্টারন্যাশনালে। ১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়ান গেমসে সিঙ্গলসে জিতেছিলেন ব্রোঞ্জ পদক।
১৯৮৮-‌তে আর জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। সিনিয়র ন্যাশনালে সেবারই প্রথম হারেন। ১৯৮৭-‌র শেষ দিক থেকেই নিজের ফর্ম হারাতে শুরু করেছিলেন। এর কারণ ছিল দাম্পত্য জীবনের ঘোর সমস্যা।
১৯৭৮ সালে জুনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে চিনের বেজিংয়ে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল সৈয়দ মোদির। বয়স তখন ১৬। তাঁর সমবয়সী অমিতা কুলকার্নিও (‌জন্ম ৪ অক্টোবর, ১৯৬২)‌ ভারতের সেই দলে ছিলেন। ওখানেই দু’‌জনের ঘনিষ্ঠতার শুরু। বলা যায়, শুরু প্রেমপর্বও। একজন উত্তর ভারতের অতি সাধারণ এক মুসলিম পরিবারের ছেলে। আরেকজন মহারাষ্ট্রের এক বর্ধিষ্ণু, উচ্চ শিক্ষিত গোঁড়া হিন্দু পরিবারের মেয়ে। থাকেন মুম্বইয়ের অভিজাত এলাকায়। ওঁরা যখন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, দুই পরিবারের দিক থেকেই প্রবল আপত্তি ছিল। দুই পরিবার ও ওঁদের ঘনিষ্ঠ অনেকেরই আশঙ্কা ছিল, এই বিয়ে শেষ পর্যন্ত টিকবে না। দু’‌জনের মানিয়ে নেওয়া খুব কঠিন। ওই আপত্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে ১৯৮৪ সালে দু’‌জনে বিয়ে সেরে ফেলেন। কিন্তু বিয়ের অল্প কিছুদিন পর থেকেই দেখা দেয় নানা সমস্যা। অমিতার কার্যকলাপ, জীবনযাত্রার ধরন মেনে নিতে পারছিলেন না সৈয়দ মোদি। এর মধ্যেই লখনৌয়ে এক অনুষ্ঠানে অমিতার সঙ্গে পরিচয় হয় রাজনীতিবিদ সঞ্জয় সিংয়ের। কিছুদিন পর থেকেই অমিতা-‌সঞ্জয় ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। সেটা মেনে নিতে পারছিলেন না মোদি। যা নিয়ে সংসারের অশান্তি চরম আকার নেয়। যার প্রভাব পড়ে সৈয়দ মোদির খেলায়।
১৯৮৮ সালের মে মাসে ‌অমিতা কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। ওই সন্তানের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। শোনা যায়, ঘনিষ্ঠমহলে সৈয়দ মোদি নিজেই নাকি সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। সেই সময় আত্মহত্যার ভাবনাও নাকি সৈয়দ মোদির মাথায় এসেছিল। সৈয়দ মোদির মৃত্যুর পর আদালতেও সন্তানের বৈধতার প্রসঙ্গ উঠেছিল। মেয়ের নাম রাখা নিয়েও বিতর্ক ছিল। সৈয়দ মোদির সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই অমিতা মেয়ের হিন্দু নাম রেখেছিলেন ‘‌আকাঙ্ক্ষা’‌ (Aakanksha).
ভালো আছেন অমিতা। ভালো আছেন সঞ্জয়। কিন্তু ভালো নেই সৈয়দ মোদির পরিবার। ৩২ বছর পরও এই দুর্ভাগা দেশে ওই হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার পাননি ওঁর পরিবার!‌ মেলেনি সৈয়দ মোদির পরিবারের অনেক প্রশ্নের জবাব। 

Sunday, July 19, 2020

দাবার নতুন চালও ‘‌আবিষ্কার’‌ করতে চেয়েছিলেন কলম্বাস!


দাবার নতুন চালও ‘‌আবিষ্কার’‌
করতে চেয়েছিলেন কলম্বাস!‌




নির্মলকুমার সাহা


(‌আজ ২০ জুলাই। আন্তর্জাতিক দাবা দিবস। এই উপলক্ষে ক্রীড়া জগতের বাইরের বিখ্যাত ‌‌‌‌কয়েকজনের শখের দাবা খেলার গল্প। এঁদের বাইরেও আরও অনেক বিশিষ্ট মানুষ দাবা খেলতেন বা খেলেন। তাঁদের দাবা খেলার গল্প আবার পরে কখনও।)‌ 


৫৪ বছর আগের আবছা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি ছবি। গাল ভরা দাড়ি, মাথায় টুপি, দাবা বোর্ডের সামনে বসে ফিদেল কাস্ত্রো (‌Fidel Castro)‌। উল্টো দিকে কোণাকুণি দাঁড়িয়ে চাল দিচ্ছেন ববি ফিশার। তখনও অবশ্য ববি ফিশার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হননি। খেলাটা ফিশারের সঙ্গে কাস্ত্রোর নয়। কাস্ত্রো খেলছিলেন মেক্সিকোর তরুণ খেলোয়াড় ফিলিবার্তো তেরাজাসের (‌Filiberto Terrazas)‌‌‌‌ সঙ্গে। খেলা কয়েক চাল এগোতেই কাস্ত্রোকে কিছু পরামর্শ দিতে শুরু করেন তখনকার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন টাইগ্রান পেট্রোসিয়ান। এটা দেখে তেরাজাসের পাশে দাঁড়িয়ে পড়েন ফিশার। শুরু করেনন পরামর্শ দিতে। এক সময় দেখা যায়, চালও দিতে শুরু করেছেন ফিশার। খেলাটা প্রায় হয়ে দাঁড়ায় ববি ফিশার বনাম ফিদেল কাস্ত্রো। সাদা ঘুঁটি ছিল কাস্ত্রোর। টাইগ্রান পেট্রোসিয়ানের পরামর্শে খেলাটিতে জিতেছিলেন কাস্ত্রো। এটা ১৯৬৬ সালের ঘটনা। সেবার কিউবার হাভানায় দাবা অলিম্পিয়াডের আসর বসেছিল। বিশ্বের তখনকার সেরা দাবা খেলোয়াড়রা হাজির ছিলেন ওখানে। ফিদেল কাস্ত্রো আরও অনেক তারকার সঙ্গেও ওই সময় দাবা খেলেছিলেন। টাইগ্রান পেট্রোসিয়ানের সঙ্গে একটি খেলা ড্র-‌ও করেছিলেন কাস্ত্রো। পরেও নানা সময় নানা জায়গায় কিউবার এই জননেতাকে দাবা খেলতে দেখা গিয়েছে।
শুধু ফিদেল কাস্ত্রো নন, নানা দেশের অনেক রাষ্ট্রনায়ককেই বিভিন্ন সময়ে দাবা খেলায় মেতে উঠতে দেখা গিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমেরিকার তুলনায় সাবেক সোবিয়েত ইউনিয়নে কিংবা ভেঙে যাওয়া সোবিয়েত ইউনিয়নের নানা খণ্ডে দাবা খেলার চল অনেক বেশি। কিন্তু ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে আমেরিকার বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্ট দাবার ভক্ত ছিলেন। নিজেরাও দাবা খেলতেন। যেমন বিল ক্লিন্টন (‌Bill Clinton)‌ জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির ছাত্র থাকার সময় নিয়মিত দাবা খেলতেন। দাবা খেলোয়াড় হিসেবে তখন তাঁর ভালই পরিচিতি ছিল। ১৯৬৮ সালে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি দাবা দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
আমেরিকার আরেক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারও (Jimmy Carter‌)‌ দাবা খেলতেন। হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার পর তাঁর ইচ্ছা ছিল দাবা-‌বিশেষজ্ঞ হবেন। কিনে ফেলেছিলেন দাবার অজস্র বই। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৭ সালে তিনি ওই ইচ্ছা বিসর্জন দেন। তখন বলেছিলেন, ‘‌দেখলাম, দাবা-‌বিশেষজ্ঞ হওয়ার মতো প্রতিভা আমার নেই। এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এটাই বাস্তব।’‌
আব্রাহাম লিঙ্কন (‌Abraham Lincoln)‌ তো ছিলেন পুরোপুরি দাবা পাগল। দাবা খেলতে বসলে তিনি বাকি সব ভুলে যেতেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনও হোয়াইট হাউসে নিয়মিত দাবা খেলতে বসতেন। একবার এক বিচারপতির সঙ্গে দাবা খেলছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কন। নৈশভোজ তৈরি। স্ত্রী বারবার ডাকলেও লিঙ্কন সাড়া দিচ্ছিলেন না। এবার স্ত্রী পাঠালেন পুত্র ট্যাডকে। ছেলে গিয়ে উল্টে দিলেন দাবা বোর্ড। তারপর খেতে গেলেন লিঙ্কন। আমেরিকার মিউজিয়ামেও আছে তাঁর ব্যবহার করা দাবা বোর্ড।
আব্রাহাম লিঙ্কনের অনেক আগেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন কুইনসি অ্যাডামস (John Quincy Adams)‌‌। তিনি শুধু দাবা খেলতেন না, সংগ্রহ করে রাখতেন দামী দামী দাবা সেট। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন হোয়াইট হাউসেও কিনে আনতেন ওরকম অনেক দাবা সেট। একবার আইভরির একটি দাবা সেট কেনার পর বিতর্কও হয়েছিল। বিরোধীরা প্রচার চালিয়েছিলেন তিনি নিজের শখের জন্য সরকারি অর্থ অপচয় করছেন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের দাবা খেলার কথা লিখতে গেলে সবচেয়ে বেশি এসে যায় টমাস জেফারসনের (‌Thomas Jefferson)‌ নাম। তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ১৮০১ সালে। তাঁর প্রিয় খেলা ছিল দাবা। তবে শুরু করেছিলেন একটু বেশি বয়সেই, ঊনিশে। তাঁকে দাবা খেলা শিখিয়েছিলেন উইলিয়াম অ্যান্ড মেরি কলেজের অঙ্কের অধ্যাপক ড.‌ উইলিয়াম স্মল (Dr. William Small)‌। শেখার পর প্রতি সন্ধ্যাতেই জেফারসন বন্ধুদের সঙ্গে দাবা খেলতেন। শুধু খেলা নয়, দাবার বইও সংগ্রহ করতেন। তাঁর প্রিয় বই ছিল Analysis of the Game of Chess. যার লেখক Francois Danican Philidor.‌‌‌‌ এক সময় জেফারসনের দাবা খেলার সঙ্গী ছিলেন তাঁর চেয়ে বয়সে অনেক বড় বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (‌Benjamin Franklin)‌। ১৭৩২ সালে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন দাবা নিয়ে একটি প্রবন্ধও (‌The Morals of Chess by Benjamin Franklin) লিখেছিলেন।‌ যা অবশ্য কিছুটা সংশোধন করে অনেক বছর পর ১৭৮৬ সালের ডিসেম্বর মাসে (‌Columbian Magazine)‌ প্রকাশিত হয়েছিল। নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন জেফারসন। তিনি লিখেছেন, ‘‌আমি এবং বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন সমমানের খেলোয়াড় ছিলাম।’‌ ১৭৮৪-‌১৭৮৯, জেফারসন প্যারিসে ছিলেন। ওখানে গিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন এক দাবা ক্লাবেও। জেফারসন যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন অ্যারন বার (‌Aaron Burr)‌। তিনিও ভাল দাবা খেলতেন। প্রোটোকলের বাধা সরিয়ে প্রেসিডেন্ট বনাম ভাইস প্রেসিডেন্ট দাবা খেলাও হয়েছে তখন।
পরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন জেমস মাডিসন (‌James Madison)‌। দাবায় তাঁরও আগ্রহ ছিল। দাবা খেলতেন, দাবা খেলা দেখতেন। জেফারসন এবং অ্যারন বারের বিরুদ্ধেও তিনি বেশ কয়েকটি গেম খেলেছেন। প্রেসিডেন্ট জেমস মোনরোও (‌James Monroe) দাবা খেলতে ভালোবাসতেন। শোনা যায়, জেফারসনের কাছ থেকে দাবার বেশ কিছু বইও তিনি কিনেছিলেন।
আমেরিকার আরেক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন (Richard Nixon) দাবা খেলতে বসলেও বেশি সময় বোর্ডের সামনে বসে থাকতে পারতেন না। দু-‌চার চালের পরই প্রতিদ্বন্দ্বীকে বলতেন, ‘‌ক্ষমা চাইছি, আর খেলব না। চললাম।’‌
আমেরিকার আরও কয়েকজন প্রেসিডেন্টেরও দাবা খেলার অভ্যাস ছিল। যেমন রাদারফোর্ড হেয়েস (‌Rutherford B Hayes)‌, জেমস গারফিল্ড (‌James A Garfield)‌, গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড (‌Grover Cleveland)‌, ওয়ারেন হার্ডিং (‌Warren G Harding)‌, উডরো উইলসন (‌Woodrow Wilson)‌, থিওডোর রোজভেল্ট (‌Theodore Roosevelt)‌ প্রমুখ।
এবার সাবেক সোবিয়েত ইউনিয়নে বা রাশিয়ায় যাওয়া যাক। একদা সোবিয়েত ইউনিয়নের নানা পত্রপত্রিকায়, বিশেষত দাবা ম্যাগাজিনগুলোতে একটি‌ স্লোগান খুব জনপ্রিয় ছিল। ওই স্লোগানটি আসলে ভি আই লেনিনের (‌Vladi‌‌‌‌mir Ilyich ‌‌‌‌‌Lenin)‌ একটি উক্তি, ‌‘‌Chess is the Gymnasium of the Mind‌‌‌’‌.‌ পরে অবশ্য ওটা লেনিনের উক্তি কিনা, তা নিয়ে জোর বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। তা যাই হোক, ভি আই লেনিন যে দাবার বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, এ নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। তিনি নিজেও দাবা খেলতেন। লেনিন দাবা খেলছেন, এমন ছবি তো এখনও নানা বইয়ে দেখা যায়। ইতালির ক্যাপ্রিতে গিয়েও একবার তিনি দাবা খেলতে বসে পড়েছিলেন। উল্টো দিকেও ছিলেন এক বিখ্যাত মানুষ, ম্যাক্সিম গোর্কি (‌Maxim Gorky)‌‌‌‌। এটা ১৯০৮ সালের ঘটনা। সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলেও লেনিন কিন্তু টেক্কা দিতে পারেননি গোর্কিকে। ২৬ চাল পর্যন্ত খেলাটি চলেছিল। জিতেছিলেন ম্যাক্সিম গোর্কি। নিজের দাবা খেলা নিয়ে লেনিনের অবশ্য বক্তব্য ছিল, ‘‌Chess is only a recreation and not an occupation.‌‌’‌
হারকে লেনিন সহজভাবে মেনে নিলেও তা একেবারেই পারতেন না কার্ল মার্ক্স (‌Karl Marx)‌। দাবা খেলায় হারলেই তিনি রেগে যেতেন। ১৮৫০ সালের কাছাকাছি কোনও সময়। কার্ল মার্ক্স তখন লন্ডনে। ওখানে তখন ছিলেন আরও অনেক রাজনৈতিক নেতা। মার্ক্স ওখানে একদিন খুব জোরালোভাবে ঘোষণা করলেন, তিনি দাবার একটি নতুন চাল খুঁজে পেয়েছেন, যা দিয়ে সবাইকেই হারাতে পারবেন। প্রথম দিকে জিতলেও, পরে কয়েকজনের কাছে হারলেনও। সমস্যা দেখা দিল, যাঁদের কাছে হারছেন, তাঁদের আবার পরের দিন দাবা খেলার আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। লন্ডনে সেবার ওই দাবা খেলা বন্ধ করতে উদ্যোগ নিতে হয়েছিল কার্ল মার্ক্সের স্ত্রীকে। তিনিই দাবা খেলতে আসা অতিথিদের ফিরিয়ে দিতেন। বলতেন, ‘‌আপনারা আর এখানে দাবা খেলতে আসবেন না। হারলে পরে বাড়িতে আর থাকা যাচ্ছে না। ওঁর আচরণ অসহ্য হয়ে উঠছে।’‌
অন্য জগতের বিখ্যাতদের দাবা খেলা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে উঠে আসবে আরও অনেক নাম। নেপোলিয়ান (‌Napoleon Bonaparte)‌, ভলতেয়ার (‌Voltaire)‌, তলস্তয় (‌Leo Tolstoy)‌, চে গুয়েভেরা (‌Che Guevara)‌, আইজাক নিউটন (‌Isaac Newton)‌, ইয়েসার আরাফাত (‌Yasser Arafat)‌, উইনস্টন চার্চিল (‌Winston Churchill)‌, রুশো (‌Jean-Jacques Rousseau)‌, স্ট্যালিন (‌Joseph Stalin)‌, চার্লি চ্যাপলিন (Charlie Chaplin), উইলিয়াম সেক্সপিয়ার (‌William Shakespeare)‌, জর্জ বার্নাড শ (‌George Bernard Shaw), চার্লস ডিকেন্স (Charles Dickens), সলমন রুশদি (Salman Rushdie)— আরও কতো নাম।
চার্লি চ্যাপলিন তখন থাকতেন লস এঞ্জেলস অ্যাথলেটিক ক্লাবের বিশাল এক ঘরে। সেখানে আসা-‌যাওয়া ছিল সমাজের উঁচুতলার অনেক লোকজনের। তাঁদের বিনোদনের জন্য ছিল নানা ব্যবস্থা। যার একটি দাবা। চার্লি চ্যাপলিনও‌‌ সেখানে দাবা খেলতেন। ‌‌‌‌‌চ্যাপলিনের আত্মজীবনীতেও দু’‌পাতা জুড়ে আছে তাঁর দাবা খেলার গল্প। স্যামুয়েল রেসেভস্কি (‌Samuel Reshevsky)‌‌‌‌ পোলান্ড-‌জাত এই দাবা খেলোয়াড় ৯ বছর বয়সে মা-‌বাবার সঙ্গে পাকাপাকি চলে যান অমেরিকায়। পরে গ্র‌্যান্ডমাস্টার হয়েছিলেন। কিন্তু এর চেয়েও বড় কথা রেসেভস্কির দাবা খেলার শুরুটা ছিল দারুণ। ১০‌-‌১১ বছর বয়সেই চারিদিকে রেসেভস্কিকে নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। রেসেভস্কির ভক্তের তালিকায় ছিলেন চার্লি চ্যাপলিনও। ১৯২৩ সালে রেসেভস্কিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ডেকে এনেছিলেন চ্যাপলিন। খেলতে বসেছিলেন দাবা।
চে গুয়েভেরার দাবার ‘‌গুরু’‌ ছিলেন তাঁর বাবা । ১২ বছর বয়সে বাবার কাছেই তাঁর দাবা-‌শিক্ষা শুরু। বাবার কোচিংয়ে অল্পদিনেই খুব ভালোভাবে দাবা খেলার নানারকম চাল শিখে ফেলেছিলেন গুয়েভেরা। তখন ছোটদের প্রতিযোগিতায় খেলে কিছু প্রাইজও পেয়েছেন। কিন্তু পরে অন্য জগতে চলে যাওয়ায় পেশাদার দাবা খেলোয়াড় হয়ে ওঠা হয়নি। তবে সময় পেলেই শখের দাবা খেলতে বসে পড়তেন।
অন্য জগতের তারকাদের দাবা খেলা একেক জনের কাছে একেকরকম। পছন্দ-‌অপছন্দের নানা রকম ফের। অভিনেত্রী গেবরের (Zsa Zsa Gabor) দাবার প্রতি ভালোবাসা এতটাই গভীর ছিল যে, যেখানেই যেতেন সঙ্গে থাকত দাবা বোর্ড, ঘুঁটি। ‌‌‌৯ বার বিয়ে করেছিলেন এই অভিনেত্রী। বিয়ে আর ডিভোর্স, এটাই ছিল যেন তাঁর জীবনের নেশা। তাঁর তৃতীয় স্বামী অভিনেতা জর্জ স্যান্ডার্স‌‌‌‌‌ও (‌George Sanders) ছিলেন দাবার ভক্ত। বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমায়ও ওঁরা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন দাবা বোর্ড, ঘুঁটি। অনেকটা সময় দু’‌জনে কাটিয়ে দিয়েছিলেন দাবা খেলেই। স্বামী-‌স্ত্রীর সেই দাবা খেলা থামতেই চাইত না। আসলে কেউ হেরে শেষ করতে চাইতেন না। একজন হারলেই আরেকজনকে বোর্ডের সামনে থেকে উঠতে দিতেন না। দাবি, আরেক গেম খেলতে হবে। এভাবেই গড়িয়ে যেত সময়।
পপ তারকাদের জগতেও দাবা রীতিমতো পরিচিত। বিখ্যাত আইরিশ পপ তারকা বোনো (‌পুরো নাম Paul David Hewson)‌ স্কুলে দাবায় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। পরে অন্য জগতে চলে গেলেও দাবার নেশা ছাড়তে পারেননি। ‌‌‌‌গত শতাব্দীর দাবার সেরা লড়াই ১৯৭২ সালে ফিশার-‌স্প্যাশকির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা। যা সারা বিশ্বে আলোড়ন ফেলেছিল। বোনোর বয়স তখন ১২ বছর। ওই লড়াইয়ের প্রভাব পড়েছিল বোনোর শৈশবেও। দাবার প্রতি ভালোবাসার জন্ম সেখান থেকেই। বোনোর একটি লেখায় রয়েছে, ‘‌Thinking ahead, thinking around corners, guessing somebody else's next move....these were the pleasures of chess for me....my greatest childhood pleasure. In Ballymun we had a chess club, like so many kids at the beginning of the 70s, I fell head over heels for this dizzy strategic game. I have fond memories of the Phisboro C‌‌‌lub also where myself and my friend Joseph Marks were let play with the grown ups.’‌
ফিশার-‌স্প্যাশকি লড়াইয়ের প্রভাবে দাবা খেলা শুরু করলেও একসময় বোনোর প্রিয় তারকা হয়ে উঠেছিলেন আনাতলি কারপভ। পরে গ্যারি কাসপারভ। কয়েকবছর আগে ডাবলিনে কাসপারভের সঙ্গে দেখা হয়েছিল বোনোর। দাবা নিয়ে অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল দু’‌জনের। ওই সাক্ষাৎকারের পর নিজের ওয়েবসাইটে কাসপারভ অবশ্য লিখেছিলেন, ‘‌It was a great pleasure to meet Bono during my visit to Dublin. I was not sure what to expect considering our different backgrounds but we had a fascinating conversation, And despite his self-deprecation, I could see from the fire in his eyes when he spoke about chess that perhaps it might not be too hard to convince him to return to the board, even if just for a charity exhibition. And I'm sure he'd last much longer than three moves!‌‌‌‌‌’‌
আরেক পপ তারকা ম্যাডোনা (‌পুরো নাম Madonna Louise Ciccone)‌ তো দাবা খেলার জন্য পেশাদার কোচও রেখেছিলেন। তিনি ও তাঁর দ্বিতীয় স্বামী রিচি (পুরো নাম Guy Ritchie)‌‌‌‌‌ দাবার প্রশিক্ষণ নিতেন স্কটল্যান্ডের‌‌‌‌ নামী  খেলোয়াড় অ্যালান নরিসের (‌Alan J Norris) কাছে। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ম্যাডোনার সবসময়ই পছন্দ ছিলেন রিচি।
এক নেশা ছাড়াতে গিয়ে আরেক নেশা ধরেছিলেন সুরকার রে চার্লস (Ray Charles Robinson)। ‌‌‌তিনি তখন হেরোইনের নেশা ছাড়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। সপ্তাহে তিন দিন যেতে হত ‌‌‌‌‌‌‌মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের (Dr. Friedrich Hacker) কাছে। সেই ডাক্তারই ধরিয়ে দিয়েছিলেন দাবার নেশা। শৈশব থেকেই রে চার্লস ছিলেন দৃষ্টিহীন। ফলে বিশেষ দাবা বোর্ড ব্যবহার করতেন। মৃত্যুর ২ বছর আগে, ২০০২ সালে তিনি আমন্ত্রণ ‌‌‌জানিয়ে খেলতে বসেছিলেন আমেরিকার গ্র‌্যান্ডমাস্টার ল্যারি ইভান্সের (‌Larry Melvyn Evans) বিরুদ্ধে। সেই লড়াইয়ে অবশ্য হেরেছিলেন।
উইনস্টন চার্চিলের পছন্দ ছিল ব্লিৎজ চেস। তিনি খেলতে ভালোবাসতেন ইংলিশ ডিফেন্সে। অভিনেতা ম্যাকাউলে কালকিনের (‌Macaulay Carson Culkin) পছন্দ একাএকা দাবা খেলা। বোর্ডে ঘুঁটি সাজিয়ে বসে দু’‌দিকের চাল নিজে দেওয়াতেই তাঁর যত আনন্দ!‌
অনেক বেশি বয়সে দাবা খেলা শুরু করা ক্রিস্টোফার কলম্বাস (‌Christopher Columbus) বোর্ড ছেড়ে উঠতেই চাইতেন না। নিশ্চিত পরাজয় জেনেও লড়তেন শেষ চাল পর্যন্ত। বলতেন, ‘‌চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কীসের?‌ শেষ মুহূর্তেও তো নতুন কোনও চাল আবিষ্কার করে ফেলতে পারি।’‌
‘‌আবিষ্কার’‌ শব্দটির গুরুত্ব ক্রিস্টোফার কলম্বাসের চেয়ে আর কে বেশি বুঝবেন!‌

Saturday, July 4, 2020

শচীন নাগের সাঁতার শুরু পুলিশের তাড়া খেয়ে বেনারসের গঙ্গায় ঝাঁপিয়ে



১৯৪৭-‌এর দাঙ্গার সময় একদিন অনুশীলন শেষে শোভাবাজার ঘাট থেকে ফিরছিলেন বাড়িতে। রাস্তায় তখন চলছে গুলির লড়াই। গুলি এসে লাগে শচীনের ডান পায়ের হাঁটুর ওপরের দিকে। হাড় ৩২ টুকরো হয়ে যায়। বালিগঞ্জের লেক মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন টানা তিন মাস। 


শচীন নাগের সাঁতার শুরু
পুলিশের তাড়া খেয়ে
বেনারসের গঙ্গায় ঝাঁপিয়ে


নির্মলকুমার সাহা


তখন স্বদেশি আন্দোলন চলছে। ১৯৩০ সালের কোনও একদিন বেনারসের গঙ্গার ধারে ১০ বছরের একটা ছেলে ঘোরাঘুরি করছিল। তখনই গঙ্গার পাশের রাস্তায় গণ্ডগোল শুরু হয়। পুলিশ তাড়া করে। ছেলেটি কোনও উপায় না দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলে। ঘাটে থাকা একঝাঁক নৌকোর ফাঁকে লুকিয়ে থাকে। তখন ঘাটে ও সামনের রাস্তায় চলছে পুলিশের ধরপাকড়। এবার ছেলেটা অন্য পথ নেয়। ডুব সাঁতার কেটে চলে যায় ওপারে। গঙ্গায় তখন সবে শুরু হয়েছে ১০ কিলোমিটারের এক সাঁতার প্রতিযোগিতা। সে মিশে যায় প্রতিযোগীদের দলে। সাঁতার কাটতে কাটতে পৌঁছেও যায় প্রতিযোগিতার শেষ রেখায়। একটা প্রাইজও পেয়ে যায়। দু’‌জনের পরে পৌঁছে তৃতীয় পুরস্কার। এই পুরস্কারটাই সাঁতারের প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয় ছেলেটার।
২১ বছর পরের ঘটনা। সেদিনের সেই বাচ্চা ছেলেটা তখন ৩১ বছরের যুবক। ১৯৫১ সালের ৭ মার্চ, দিল্লির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের সুইমিং পুলে গড়ে ফেলেন ইতিহাস। সব খেলা মিলিয়ে প্রথম ভারতীয় হিসেবে গলায় পরেন এশিয়ান গেমসের সোনার পদক। ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল সাঁতারে (‌সময় ১:‌০৪.‌৭)‌। তিনি শচীন নাগ। সেদিন তাঁর সোনা জেতার সময় দর্শক আসনে ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। জল থেকে উঠেই প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন পেয়ে আপ্লুত হয়েছিলেন এই বাঙালি সাঁতারু। সোনার অভিযানের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না শচীনের। হিটে নিজের গ্রুপে পেয়েছিলেন তৃতীয় স্থান। কিন্তু তাতে ভেঙে পড়েননি। ফাইনালে দুর্দান্ত লড়াই করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছিলেন। তারপর কেটে গিয়েছে আরও ৬৯ বছর। দ্বিতীয় কোনও ভারতীয় সাঁতারুর গলায় আর ওঠেনি এশিয়ান গেমসের সোনার পদক। সেদিনের সেই ইতিহাস গড়া নায়কের এতদিনেও জোটেনি কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও পুরস্কার, সম্মান। বেঁচে থাকতেও পাননি। মরণোত্তর কোনও সম্মানও নয়। বারবার আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এবারও মরণোত্তর ধ্যানচাঁদ পুরস্কারের জন্য শচীন নাগের নাম প্রস্তাব করেছেন প্যারা সুইমার প্রশান্ত কর্মকার। দেখা যাক কী হয়!‌ যে শহরে তিনি ইতিহাস গড়েছিলেন, সেই দিল্লিতেই ১৯৮২ সালে আবার বসেছিল এশিয়ান গেমসের আসর। সিরি ফোর্টে গেমস ভিলেজে একটা ব্লক তাঁর নামে করা হয়েছিল। ব্যস, স্বীকৃতি বলতে ওই পর্যন্তই। কেন্দ্রের বঞ্চনা থাকলেও রাজ্যে কিন্তু কিছুটা স্বীকৃতি মিলেছে তাঁর। বামফ্রন্টের আমলে পেয়েছিলেন স্পোর্টস ডে অ্যাওয়ার্ড। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর মদন মিত্র ক্রীড়ামন্ত্রী থাকার সময় ২০১২ সালে দেওয়া হয়েছিল মরণোত্তর সম্মান।
১৯৫১-‌র এশিয়ান গেমসে আরও দু’‌টি পদক জিতেছিলেন শচীন নাগ। দু’‌টিই ব্রোঞ্জ। ৪x১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল রিলেতে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন ওই একই দিনে, সোনা জয়ের পর। ওই রিলে দলে ছিলেন আইজাক মনসুর, বিমল চন্দ্র, শম্ভু সাহা ও শচীন নাগ। আর সোনা জয়ের আগের দিন জিতেছিলেন ৩x১০০ মিটার মেডলি রিলেতে ব্রোঞ্জ। ওই দলে ছিলেন কান্তি শাহ, নাইগামওয়ালা ও শচীন নাগ।
যে এশিয়ান গেমসে সোনা জিতে ইতিহাস গড়েছিলেন, সেই এশিয়ান গেমসের আগেও উপেক্ষা, অবহেলার শিকার হতে হয়েছিল শচীনকে। মার্চ মাসে এশিয়ান গেমস। ভালোভাবে অনুশীলনের জন্য ডিসেম্বরেই তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন দিল্লি। কিন্তু ওখানে পৌঁছেই পড়েন ঘোর সমস্যায়। দিল্লির কোনও পুলে জল নেই। কোথায় সারবেন প্রস্তুতি?‌ কর্মকর্তাদের বলেও কোনও লাভ হয়নি। সামান্য সহযোগিতাও পাননি। উল্টে কর্মকর্তারা ধমক দিয়েছেন, ‘‌কে তোমাকে আগে আসতে বলেছিল?‌’‌ অসহায় শচীন দিল্লিতে ছিলেন বন্ধু রবীন্দ্রনাথ মিত্রর বাড়িতে। দু’‌জনে এখানে-‌ওখানে ঘুরে সিসিল হোটেলের ২০ মিটার সুইমিং পুল খুঁজে পান। টাকা দিয়ে সেখানেই শচীন শুরু করেন অনুশীলন। কিন্তু কতদিন টাকা দিয়ে ওখানে অনুশীলন করবেন?‌ চিন্তা বাড়তেই থাকে।‌ ততোদিনে হোটেলের বিদেশি বোর্ডাররা শচীনের নিষ্ঠা, ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছেন। ওই হোটেলের ম্যানেজার ছিলেন ইতালীয় এক মহিলা। বিদেশি বোর্ডাররা তাঁকে অনুরোধ করেন, অনুশীলনের জন্য শচীনের কাছ থেকে টাকা না নেওয়ার। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েছিলেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। তারপর যে কদিন শচীন ওখানে অনুশীলন করেছেন আর টাকা দিতে হয়নি। সোনা জেতার পর ওই হোটেলে গিয়ে ইতালীয় ম্যানেজার ও কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এসেছিলেন শচীন। আগে দিল্লি পৌঁছে যে উপেক্ষার শিকার হয়েছিলেন, সোনা জেতার পরও সেটা মনে রেখেছিলেন। দিল্লি থেকে হাওড়া ফেরার জন্য ট্রেনের থার্ড ক্লাসের ভাড়া বাবদ কর্মকর্তারা ৩০ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন। শচীন ওই টাকা নেননি। ফিরেছিলেন নিজের টাকায়।
শচীনের বাবা অনুকূলচন্দ্র নাগ (‌মা কুসুমকুমারী দেবী)‌ চাকরি করতেন রেলে। চাকরিসূত্রেই থাকতেন বেনারসে। ওখানেই জন্ম শচীনের, ১৯২০ সালের ৫ জুলাই। শৈশবে বাড়ির বড়দের সঙ্গে গঙ্গায় স্নান করতে করতেই সাঁতার শেখা শচীনের। সেটা একেবারেই শখের সাঁতার। পুলিশের তাড়া খেয়ে গঙ্গায় ঝাঁপিয়ে তৃতীয় পুরস্কার পাওয়াটাই ঘুরিয়ে দেয় জীবনের গতি। তারপর নিয়মিত অংশ নেওয়া শুরু হয় বেনারসের নানা সাঁতার প্রতিযোগিতায়। কখনও ১০ কিলোমিটার, কখনও ৬ কিলোমিটার সেই সব সাঁতার প্রতিযোগিতায় তখন নিশ্চিত ছিল শচীনের পুরস্কার।
উত্তর কলকাতার হাটখোলা ক্লাবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন যামিনী দাস। সাঁতারের জন্যই ওই যামিনী দাসের হাত ধরে শচীনের কলকাতায় চলে আসা ১৯৩৭ সালে। বেনারসে শচীনের সাঁতার দেখে হাটখোলা ক্লাবে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। ওই সময় কলকাতায় ১০০ বা ২০০ মিটারের চেয়ে দূর পাল্লার সাঁতারের প্রচলন ছিল বেশি। গঙ্গায় দূরপাল্লার সাঁতারই ছিল জনপ্রিয়। কলকাতায় এসে প্রথম বছরেই গঙ্গায় ১০ কিলোমিটার সাঁতারে দ্বিতীয় হন শচীন নাগ। তারপর দূরপাল্লার সাঁতারে পরপর সাফল্য পেতে থাকেন। তখন মদন সিং, দুর্গা দাস, রাজারাম সাহুদের যুগ। তাঁদের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় শচীন নাগের নামও। ১৯৩৮ সালে কলেজ স্কোয়ারে সারা বাংলা সাঁতার প্রতিযোগিতায় ১০০ ও ৪০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে শচীন হারান মদন সিং, রাজারামকে। পুকুর বা পুলের স্বল্প দূরত্বের সাঁতারে শচীনের উত্থান শুরু ওখান থেকেই। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। রাজ্য ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় পেয়েছেন একের পর এক সাফল্য, পুরস্কার। তখন বাংলার ফ্রি স্টাইল সাঁতারের ঊজ্জ্বল নাম দিলীপ মিত্র। ১৯৩৯ সালে ন্যাশনাল সুইমিং ক্লাবের সারা বাংলা সাঁতার প্রতিযোগিতায় ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে শচীন চ্যাম্পিয়ন হন মদন সিংকে হারিয়ে। সময় ২:‌২৮.‌৩। যা ছিল দুর্গা দাসের তখনকার রাজ্য রেকর্ডের (‌২:‌২৯.‌০)‌ চেয়ে ভালো। ওখানেই ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন দিলীপ মিত্রের জাতীয় রেকর্ডের সমান সময় (‌১:‌০৪.‌০০)‌ করে। ‌১৯৪০ সালে ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে শচীন ভাঙেন (‌১:‌০২.‌২৫)‌ দিলীপ মিত্রর ওই জাতীয় রেকর্ড (‌১:‌০৪.‌০০)‌। পরে ওই রেকর্ড আরও উন্নত করে নিয়েছিলেন শচীন নাগ। ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে তাঁর রাজ্য রেকর্ড ৩১ বছর অক্ষত ছিল।
যখন স্বল্প দূরত্বের ফ্রি স্টাইল সাঁতারে সারা ভারতে নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলছেন, তখনই একটি দুর্ঘটনায় শচীনের সাঁতার-‌জীবনের ভবিষ্যত প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৭-‌এর দাঙ্গার সময় একদিন অনুশীলন শেষে শোভাবাজার ঘাট থেকে ফিরছিলেন বাড়িতে। রাস্তায় তখন চলছে গুলির লড়াই। গুলি এসে লাগে শচীনের ডান পায়ের হাঁটুর ওপরের দিকে। হাড় ৩২ টুকরো হয়ে যায়। বালিগঞ্জের লেক মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন টানা তিন মাস। অস্ত্রোপচারের পর ডাক্তার বলেছিলেন, অন্তত দু’‌বছরের আগে সাঁতারে ফেরার সম্ভাবনা নেই। ডাক্তারের ওই আশঙ্কাকে পুরোপুরি ভুল প্রমাণ করেছিলেন শচীন। ডাক্তারের নির্দেশ অমান্য করেই চলে গিয়েছিলেন বেনারসে। ওখানে গঙ্গায় অনুশীলন করে নিজেকে আবার প্রতিযোগিতায় নামার উপযুক্ত করে তুলেছিলেন। শুধু সাঁতারে ফেরা নয়, ১৯৪৮-‌এর লন্ডন অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতাও অর্জন করে নিয়েছিলেন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর সেটাই ছিল প্রথম অলিম্পিক। লন্ডনে তিনি অংশ নিয়েছিলেন ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে। সাঁতারের পাশাপাশি শচীন খেলতেন ওয়াটারপোলোও। তাতেও তিনি ছিলেন দেশের সেরাদের তালিকায়। তাই লন্ডন অলিম্পিকে ভারতের ওয়াটারপোলো দলেও জায়গা করে নিতে সমস্যা হয়নি। ওয়াটারপোলোয় ভারতে সেবার একটি ম্যাচই জিতেছিল, চিলির বিরুদ্ধে ৭-‌৪ গোলে। সেই ম্যাচে ভারতের হয়ে ৪ টি গোল করেছিলেন শচীন। পরে আরও একটি অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সেটা ১৯৫২ সালে হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে। সেবার সাঁতার নয়, তিনি ছিলেন ভারতের ওয়াটারপোলো দলের সদস্য।
শচীন নাগদের যুগে খেলাধুলো এখনকার মতো ছিল না। দেশে, বিদেশে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য অনেক খেলাতেই টাকা দিতে হত খেলোয়াড়দের। একসময় শোভাবাজারে অনুশীলনের পর রাতের অন্ধকারে বড়বাজারে এসে লরি পরিষ্কার করে খেলার খরচ যোগাড় করেছেন। ১৯৪৮ সালে লন্ডন অলিম্পিকের আগে শচীন নাগকে অর্থ সাহায্য করার জন্য ‘‌উত্তরা’‌ সিনেমা হলে একটা অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেখানে বিনা পারিশ্রমিকে গান গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখার্জি।
নিজে যখন সাঁতারু তখন থেকেই পরের প্রজন্মের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া শুরু। হাটখোলা ক্লাবেই এশিয়ার প্রথম মহিলা ইংলিশ চ্যানেলজয়ী আরতি সাহার সাঁতার শুরু। বিজিতেন্দ্র নাথ বসু আরতিকে নিয়ে এসেছিলেন হাটখোলা ক্লাবে। তারপর যামিনী দাস ও শচীন নাগের প্রশিক্ষণেই নিজেকে বড় সাঁতারু হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন আরতি। শচীন নাগের কাছে একদা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নাফিসা আলি, আরও অনেকেও।
‘‌কোনি’‌ সিনেমায় বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির ভূমিকায় অভিনয়ও করেছেন শচীন নাগ। অভিনয় করেছেন আরও একটি সিনেমায়, সৌমিত্র-‌তনুজা অভিনীত ‘‌অপর্ণা’‌য়।
দেখতে দেখতে তাঁর জন্ম শতবর্ষ চলে গেল। সারা বছরে রাজ্য সাঁতার সংস্থা, বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন বা সুইমিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সামান্য উদ্যোগও দেখা যায়নি কোনও অনুষ্ঠান করার। আজ ২০২০-‌র ৫ জুলাই, শচীন নাগের ১০০ বছর পূর্ণ। পরিবারের লোকেদের পরিকল্পনা ছিল আজ ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন একটি অনুষ্ঠান করার। কিন্তু এখন করোনা আতঙ্ক, লকডাউনে সারা দেশে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্তব্ধ। শচীন নাগের পুত্র অশোক নাগ জানালেন, তাই ইচ্ছে থাকলেও পরিবারের লোকেরা সবাইকে নিয়ে কোনও অনুষ্ঠান করতে পারছেন না। ঘটনাচক্রে এবার হাটখোলা ক্লাবেরও শতবার্ষিকী। দুই শতবর্ষ মিলে ওই ক্লাবের গর্বের সময়। অন্যরা ভুলে গেলেও হাটখোলা ক্লাবের গর্বের শচীন নাগের কথা ভোলেননি কর্তৃপক্ষ। শতবর্ষে হাটখোলা ক্লাবে বসেছে শচীন নাগের মূর্তি। সঙ্গে ওই ক্লাবের আরেক গর্ব আরতি সাহার মূর্তিও।


জন্ম:‌ ৫ জুলাই, ১৯২০
মৃত্যু:‌ ১৯ আগস্ট, ১৯৮৭‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌

আজ বাঙালির অলিম্পিক অভিযান শুরুর শতবর্ষ পূর্তি, বিস্মৃত পি সি ব্যানার্জি

 ‌ বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (‌বি ও এ)‌ আছে, রাজ্য অ্যাথেলটিক্স সংস্থা আছে। জন্ম শতবর্ষে কোনও অনুষ্ঠান করে প্রথম বাঙালি অলিম্পিয়ানকে শ্রদ...