Friday, June 19, 2020

হোম কোয়ারান্টিনে থেকেই চাকরির খোঁজে অলিম্পিয়ান ভগীরথ




গুলি, বন্ধুকের আকর্ষণেই আর্মির চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ভগীরথ সামই। সেকেন্দ্রাবাদে চাকরিতে যোগ দিয়েই শুটিং শুরু করেন।‌ শুটিংয়ে পেয়েছেন অনেক সাফল্য। ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৭, জাতীয় প্রতিযেগিতায় টানা অংশ নিয়েছেন। জাতীয় প্রতিযোগিতায় জিতেছেন মোট ৮৭ টি সোনা।



হোম কোয়ারান্টিনে
থেকেই চাকরির খোঁজে
অলিম্পিয়ান ভগীরথ 



নির্মলকুমার সাহা



১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যা এখনও কষ্ট দেয় অলিম্পিয়ান ভগীরথ সামইকে। মেদিনীপুরের চাঁইপাট গ্রামটাই তো সেই বন্যার জলে তলিয়ে গিয়েছিল। ভগীরথদের দুটো কুঁড়ে ঘর আর কী করে রেহাই পাবে!‌ ওরই একটি ঘরে জলবন্দী হয়ে মারা গিয়েছিলেন ভগীরথের বাবা গোপীনাথ সামই।
সামনের ১১ আগস্ট ভগীরথের বয়স ৬৩ পূর্ণ হবে। এই অলিম্পিয়ান শুটার করোনার জেরে এখন দুর্গাপুরের বাড়িতে হোম কোয়ারান্টিনে। দু’‌বছরের চুক্তিতে ঝাড়খন্ড স্টেট স্পোর্টস প্রোমোশন সোসাইটির শুটিংয়ের চিফ কোচ হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন। রাঁচিতে ছিলেন। লকডাউন চলার সময় চাকরির মিয়াদ শেষ হওয়ার পর ২ মাসেরও বেশি আটকে ছিলেন রাঁচিতেই। ফিরতে পারছিলেন না বাড়িতে। অবশেষে ৮ জুন দুর্গাপুরের বাড়িতে ফিরেছেন। ডাক্তারি পরীক্ষার পর ১৫ দিনের হোম কোয়ারান্টিন। ২৩ জুন আবার ডাক্তারি পরীক্ষা হবে। ‌
ভগীরথ চাকরি জীবন শুরু করেছিলেন আর্মিতে ১৯৭৫ সালে, শুটিংয়ে আসার আগেই। বললেন, ‘গ্রামের ছেলে ছোটবেলায় গ্রামের মাঠে চুটিয়ে ফুটবল খেলেছি। আর পুকুরে, নদীতে সাঁতার কেটেছি। ফুটবল, সাঁতারে অনেক প্রাইজও পেয়েছি। নদীতে সাঁতার প্রতিযোগিতা তখন আমার কাছে খুব আকর্ষণীয় ছিল। কিন্তু ওসবে আমার পুরোপুরি মন ভরেনি। শখ ছিল বন্দুক কাঁধে ঘুরে বেড়ানোর। ওই গুলি, বন্ধুকের আকর্ষণেই আর্মির চাকরিতে যোগ দিই। সেকেন্দ্রাবাদে (‌আর্মি অর্ডন্যান্স কোর)‌ গিয়েই শুটিং শুরু করি।’‌ শুটিংয়ে পেয়েছেন অনেক সাফল্য। ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৭, জাতীয় প্রতিযেগিতায় টানা অংশ নিয়েছেন। জাতীয় প্রতিযোগিতায় জিতেছেন মোট ৮৭ টি সোনা। রুপো ২৮, ব্রোঞ্জ ১৯। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তাঁর পদক পাঁচটি। ১৯৯১ সালে কলম্বোয় সাফ গেমসে একটি করে সোনা, রুপো ও ব্রোঞ্জ। ১৯৮৬-‌এর সিওল এশিয়ান গেমসে ও ১৯৯০ সালের অকল্যান্ড কমনওয়েলথ গেমসে ব্রোঞ্জ। ১৯৮৬ সালে পেয়েছেন অর্জুন পুরস্কার। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে বিশিষ্ট সেবা পদক পেয়েছেন ১৯৮৭ সালে। আর্মির খেলোয়াড় হিসেবে দু’‌বার (‌১৯৮৮, ১৯৮৯)‌ পেয়েছেন ‘‌কিং অফ দ্য রাইফেল’‌ পুরস্কার।
আর্মিতে ছিলেন ২০ বছর। ১৯৯৫-‌এ আর্মির চাকরি ছাড়েন। তারপর আবার ফিরে আসেন বাংলায়। দুর্গাপুরে অমরাবতী ডিফেন্স কলোনিতে বাড়ি করেন। তারপর ১৯৯৭ থেকে ২০১১, আসানসোলে একটি সংস্থায় সিকিউরিটি অফিসারের চাকরি করেন। ২০১২ থেকে ২০১৮ ছিলেন হলদিয়ায় ইন্ডিয়ান পাওয়ার কর্পোরেশনের সিকিউরিটি অফিসার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। সেই চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ওই ২০১৮ সালেই চলে যান ঝাড়খন্ডে। ওখান থেকে ফিরে হোম কোয়ারান্টিনের মাঝেই দেশের হয়ে একটি করে সোনা ও রুপো এবং তিনটি ব্রোঞ্জজয়ী ৬৩ ছুঁই ছুঁই বয়সের প্রাক্তন তারকা আবার চাকরি খুঁজছেন। এই বয়সে কেন চাকরির খোঁজ?‌ দুটি এশিয়ান গেমস (‌১৯৮২ দিল্লি, ১৯৮৬ সিওল)‌, দুটি কমনওয়েলথ গেমস (‌১৯৮২ ব্রিসবেন, ১৯৯০ অকল্যান্ড)‌ ও একটি অলিম্পিকে (‌১৯৮৪ লস এঞ্জেলস)‌ দেশের হয়ে অংশ নেওয়া শুটার দুর্গাপুর থেকে ফোনে বললেন, ‘এখনও শক্তপোক্ত আছি। কর্মক্ষমতাটা ধরে রাখতে চাই। তাই একটা ‌চাকরি খুঁজছি। সেটা শুটিং কোচের হতে পারে বা অন্য কিছু।’

No comments:

Post a Comment

আজ বাঙালির অলিম্পিক অভিযান শুরুর শতবর্ষ পূর্তি, বিস্মৃত পি সি ব্যানার্জি

 ‌ বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (‌বি ও এ)‌ আছে, রাজ্য অ্যাথেলটিক্স সংস্থা আছে। জন্ম শতবর্ষে কোনও অনুষ্ঠান করে প্রথম বাঙালি অলিম্পিয়ানকে শ্রদ...