অলিম্পিকে জোড়া সোনা
জিতে পাওয়া বন্দুকের
গুলিতে আত্মহত্যা!
নির্মলকুমার সাহা
(আজ ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক্স ডে। এই বিশেষ দিনে ১৯২৮ সালে আমস্টারডাম অলিম্পিকে ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়ে সোনাজয়ী পার্সি উইলিয়ামসকে নিয়ে দু-চার কথা।)


এখনকার কমনওয়েলথ গেমসের আগে নাম ছিল ব্রিটিশ এম্পায়ার গেমস। ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ এম্পায়ার গেমসের প্রথম আসরে ১০০ গজের দৌড়েও সোনা জিতেছিলেন পার্সি। ওই প্রতিযোগিতার সময়ই পায়ের পেশিতে টান ধরে। তারপর থেকে মাঝেমধ্যেই পেশির ওই সমস্যায় ভুগতেন। তা সত্ত্বেও ১৯৩২ সালে লস এঞ্জেলেস অলিম্পিকেও কানাডা দলে সুযোগ করে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেবার ফল ভালো হয়নি। ১০০ মিটারে বিদায় নিয়েছিলেন সেমিফাইনালে। কানাডার রিলে দলেও ছিলেন। রিলে দল পেয়েছিল চতুর্থ স্থান।
এরপরই প্রতিযোগিতামূলক অ্যাথলেটিক্স থেকে সরে দাঁড়ান। একটি বিমা কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। অংশ নিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও।
পার্সি উইলিয়ামসের জন্ম ১৯০৮ সালের ১৯ মে। বাবা ছিলেন ট্রামের কন্ডাকটর। শৈশব থেকেই নানা খেলায় উৎসাহ ছিল পার্সির। জীবনের প্রথম পদক পাওয়া সেই শৈশবে সাইকেল রেসে। টেনিসও খেলতেন তখন। আরেকটা প্রিয় খেলা ছিল শুটিং। পরে সব ছেড়ে অ্যাথলেটিক্স নিয়েই মেতেছিলেন। পার্সি যখন খুব ছোট, তখনই মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সেই থেকে পার্সি মা-র কাছেই। আমস্টারডাম অলিম্পিকেও সঙ্গে গিয়েছিলেন মা চার্লটন। পার্সি বিয়ে করেননি। মাকে নিয়েই ছিল তাঁর সংসার। ১৯৭৭ সালে মা-র মৃত্যুর পর বড্ড একা হয়ে পড়েন। কৈশোরের সেই বাতের রোগ থেকে কখনও পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেননি। মাঝেমধ্যেই ভুগতেন। বৃদ্ধ বয়সে সেই রোগটা আবার বেশিভাবে দেখা দেয়। ভীষণ কষ্ট পেতেন। একাকিত্বের জন্য মানসিক অবসাদও দেখা দেয়। অলিম্পিক থেকে জিতে আনা দুটি সোনার পদকই ১৯৮০ সালের জানুয়ারিতে দিয়ে দেন বি সি স্পোর্টস হল অফ ফেমে। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই পদক দুটি চুরি হয়ে যায়। তাতে প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পান। মদ্য পান বাড়িয়ে দেন। শেষ বয়সে তাঁর একমাত্র যাতায়াত ছিল স্থানীয় এক গল্ফ ক্লাবে। মদের বোতল চুরির দায়ে একদিন সেই ক্লাব থেকেও পার্সিকে বের করে দেওয়া হয়। এতে আরও ভেঙে পড়েন।
ভালবাসতেন নানারকম বন্দুক সংগ্রহ করতে। বাড়িতে অনেক বন্দুক ছিল। যার মধ্যে একটি অলিম্পিকে জোড়া সোনা জিতে দেশে ফেরার পর উপহার পেয়েছিলেন। ভ্যাঙ্কুবারে নিজের বাড়িতে সেই বন্দুকটি থেকেই মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন ১৯৮২ সালের ২৯ নভেম্বর।
জন্ম: ১৯ মে, ১৯০৮।
মৃত্যু: ২৯ নভেম্বর, ১৯৮২।
No comments:
Post a Comment