Friday, May 15, 2020

‘‌ওগো বধূ সুন্দরী’-‌‌র লোলা বোস খেলার মাঠেও ছিলেন সফল


বাংলা চলচ্চিত্রের সফল অভিনেত্রী মীনাক্ষী খেলার জগতেও ছিলেন বিখ্যাত 


‘‌ওগো বধূ সুন্দরী’-‌‌র
লোলা বোস খেলার
মাঠেও ছিলেন সফল 



নির্মলকুমার সাহা


১৯৫২ সালে মস্কোতে হয়েছিল মহিলাদের প্রথম বিশ্ব ভলিবল প্রতিযোগিতা। অংশ নিয়েছিল সোবিয়েত ইউনিয়ন, পোলান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, ফ্রান্স ও ভারত। শুধু উত্তরপ্রদেশের মেয়েদের নিয়ে গড়া একটি ভারতীয় দল ওই বিশ্ব ভলিবল প্রতিযোগিতায় খেলতে গিয়েছিল। যে দলে ১২ জনের মধ্যে ৭ জন ছিলেন প্রবাসী বাঙালি মেয়ে। সেই প্রথম ভারতের কোনও মহিলা ভলিবল দলের বিদেশে খেলতে যাওয়া। ফল একেবারেই ভাল হয়নি। ৮ দলের প্রতিযোগিতায় ভারত পেয়েছিল অষ্টম স্থান। রাউন্ড রবিন লিগের সাতটি ম্যাচেই বিশ্রীভাবে হেরেছিল ভারত। কোনও ম্যাচেই একটি সেটও পায়নি। ওই দলের খেলোয়াড় ছিলেন মীনাক্ষী চৌধুরি। পরে নানা সময়ে তিনি বলেছেন, ‘‌সেবার মস্কো গিয়েই বুঝেছিলাম, খেলাধুলোয় আমরা কতটা পিছিয়ে। খেলাধুলোর মান সম্পর্কে আমার ধারণাই বদলে গিয়েছিল।’‌
১৯৫২ (‌মাদ্রাজ)‌, ১৯৫৩ (‌ত্রিবান্দ্রম)‌ ও ১৯৫৪ সালে (‌দিল্লি)‌ ভলিবলে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া উত্তরপ্রদেশ দলে ছিলেন মীনাক্ষী। ১৯৫৩ সালে ছিলেন অধিনায়িকা।
শুধু ভলিবল নয়, মীনাক্ষী ছিলেন নানা খেলায় পারদর্শী। ১৯৫৪ সালে জাতীয় বাস্কেটবলের আসর বসেছিল কলকাতায়। মহিলা বিভাগে বাংলা বনাম উত্তরপ্রদেশ খেলা। এক দলে নির্মলা মুখার্জি, রেণু সিমলাই, মীনাক্ষী চৌধুরি, শুক্লা রায়, এষা চ্যাটার্জিরা। অন্য দলে রোজ, মার্গারেট, ডালসি, মেরিরা। কোনটা বাংলা দল, আর কোনটা উত্তরপ্রদেশ?‌ নামগুলো দেখে ভুল হওয়ারই সম্ভাবনা। আসলে উত্তরপ্রদেশ দলটা ছিল বাঙালি মেয়েতে ভর্তি। আর বাংলা দলে ঠাসা অবাঙালি মেয়ে। ওই উত্তরপ্রদেশ দলের মধ্যমণি ছিলেন মীনাক্ষী। বাংলার কাছে উত্তরপ্রদেশ হারলেও মীনাক্ষী বিস্তর প্রশংসা কুড়িয়ে ফিরেছিলেন। 
একসময় এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দলেই মীনাক্ষীর জায়গা ছিল পাকা। অ্যাথলেটিক্সের ডিসকাস, জ্যাভেলিন, শটপাটে ছিলেন দক্ষ। সাইক্লিং, ব্যাডমিন্টন, হকিও বাদ যায়নি মীনাক্ষীর খেলার তালিকা থেকে। ১৯৫৩ সালে সাইক্লিংয়ে এলাহাবাদ জেলা চ্যাম্পিয়ন। ১৯৫৪ সালে ব্যাডমিন্টনে ইউনিভার্সিটি চ্যাম্পিয়ন। ১৯৫৩ সালে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে মহিলা বিভাগে ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন। সর্ব ভারতীয় আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিক্সে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের। হকিতে ছিলেন সেন্টার হাফ। ওঁদের হকি দল একাধিকবার এলাহাবাদ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
১৯৫৫ সালে ব্যাঙ্গালোরে (‌এখন বেঙ্গালুরু)‌ এসেছিলেন ১৯৫২-‌র অলিম্পিকে জ্যাভেলিন থ্রো-‌তে সোনাজয়ী ডানা জ্যাটোপকোভা। তাঁর সঙ্গে এগজিবিশনে নেমেছিলেন মীনাক্ষী। পরে মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‌অবাক হয়ে শুধু দেখেছিলাম, কত দূর জ্যাভেলিন ছোঁড়া যায়!‌’‌
লেখাপড়ায়ও ছিলেন কৃতী ছাত্রী। ১৯৫০ সালে ইউ পি বোর্ডের প্রবেশিকা পরীক্ষায় পেয়েছিলেন চতুর্দশ স্থান। ১৯৫২ সালে ইন্টারমিডিয়েটে একাদশ স্থান। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পরে গ্র‌্যাজুয়েট হন। স্কুল ও কলেজ জীবনে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায়ও। ১৯৫২ সালে এলাহাবাদে একটি সর্ব ভারতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন।
১৯৫৬ সালে বিয়ে হয় কলকাতার বাচস্পতি গোস্বামীর সঙ্গে। এলাহাবাদের পাট চুকিয়ে, চৌধুরি থেকে গোস্বামী হয়ে বিয়ের পর পাকাপাকি চলে আসেন কলকাতায়। বাস্কেটবলের টানে খেলতে গিয়েছিলেন রাখী সঙ্ঘে। কমবয়সীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে খেলা থেকে সরে আসেন। পরে ভর্তি হয়েছিলেন লাইফ সেভিং সোসাইটিতে সাঁতারের জন্য। এলাহাবাদে অনেক খেলার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেও সাঁতারটা সেভাবে করা হয়নি। কলকাতায় এসেই সাঁতার শুরু। সাঁতার থেকে ওয়াটার ব্যালে। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে চলে আসা সিনেমায়। তারপর ‘‌ওগো বধূ সুন্দরী’‌র ‘‌লোলা বোস’‌ পাকাপাকি থেকে যান চলচ্চিত্র জগতেই। হয়ে ওঠেন বাংলা সিনেমার এক সফল অভিনেত্রী। ওগো বধূ সুন্দরী, সম্রাট ও সুন্দরী, চৌধুরী পরিবার, জোয়ার ভাঁটা, ঘরের বউ, ছোট বউ, নিশান্তে সহ ২৮ টি বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দেখা গিয়েছে টিভি সিরিয়ালেও। একসময় অভিনেত্রী মীনাক্ষী গোস্বামীর পর্দার সাফল্যে চাপা পড়ে যান মাঠের মীনাক্ষী চৌধুরি। ৮ বছর আগে মৃত্যুর পরও যাবতীয় সম্মান দিয়েছিল চলচ্চিত্রমহলই। কিন্তু খেলার জগতে উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছিলেন মীনাক্ষী।

জন্ম:‌ ২১ মে ১৯৩৩।
মৃত্যু:‌ ৮ এপ্রিল ২০১২।‌‌‌

No comments:

Post a Comment

আজ বাঙালির অলিম্পিক অভিযান শুরুর শতবর্ষ পূর্তি, বিস্মৃত পি সি ব্যানার্জি

 ‌ বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (‌বি ও এ)‌ আছে, রাজ্য অ্যাথেলটিক্স সংস্থা আছে। জন্ম শতবর্ষে কোনও অনুষ্ঠান করে প্রথম বাঙালি অলিম্পিয়ানকে শ্রদ...