ভারতীয় অলিম্পিক হকি দলের প্রাক্তন অধিনায়ক পৃথ্বীপাল সিং। ১৯৮৩ সালের ২০ মে সকালে লুধিয়ানায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই খুব কাছ থেকে আততায়ীরা গুলি করে তাঁকে। প্রথম বুলেটটি সরাসরি ঢুকে যায় মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে যান ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাক। আততায়ীরা পালানোর সময় আরও একবার গুলি করে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে
ছাত্রদের হাতে খুন
অলিম্পিক অধিনায়ক!
নির্মলকুমার সাহা
পাঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ বিভাগের প্রধান তখন ভারতীয় অলিম্পিক হকি দলের প্রাক্তন অধিনায়ক পৃথ্বীপাল সিং। ১৯৮৩ সালের ২০ মে সকালে লুধিয়ানায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই প্রশাসনিক ব্লকের বাইরে নিজের মোটর বাইক পার্কিংয়ে রাখছিলেন। সেই সময়ই খুব কাছ থেকে আততায়ীরা গুলি করে পৃথ্বীপালকে। প্রথমে বুলেটটি সরাসরি ঢুকে যায় মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে যান ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাক। আততায়ীরা পালানোর সময় আরও একবার গুলি করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তারদের কিছু আর করার ছিল না।তার আগেই মারা গিয়েছিলেন ভারতীয় হকির এক বর্ণময় চরিত্র।
পৃথ্বীপালের হত্যাকারীরা সবাই ছিল তরুণ। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পৃথ্বীপাল খুন হওয়ার একমাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে হিংসাত্মক কিছু ঘটনায় গুলি চলে। নিহত হয় এক ছাত্র। পাঞ্জাবের রাজ্যপাল এ পি শর্মা ওই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। গঠিত হয় তদন্ত কমিশন। পৃথ্বীপালের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল ওই তদন্ত কমিশনে। সেই সাক্ষ্য আর দিয়ে উঠতে পারেননি। তার আগেই খুন হতে হয় তাঁকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’দল ছাত্রের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। ওই বিবাদেরই করুণ পরিণতি এক গোষ্ঠীর ছাত্রদের হাতে অলিম্পিক অধিনায়ক পৃথ্বীপাল সিং খুন।
পৃথ্বীপালের জন্ম ১৯৩২ সালের ২৮ জানুয়ারি অবিভক্ত ভারতের নানকানা সাহিবে (যা এখন পাকিস্তানে)। ভারত ভাগের পর ওঁদের পরিবার চলে আসে এপারের পাঞ্জাবে। পৃথ্বীপালের বাবা সর্দার ওয়াধাওয়া সিং চণ্ডী ছিলেন স্কুল শিক্ষক। পাশাপাশি কৃষি বিশেষজ্ঞও। পৃথ্বীপাল শৈশব থেকেই লেখাপড়ায় ছিলেন ভাল ছাত্র। ১৯৫৬ সালে এম এস সি (এগ্রিকালচার) পাশ করেন লুধিয়ানার এগ্রিকালচার কলেজ থেকে। পরে ওটা মিশে যায় পাঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে, যেখানে তিনি খুন হন।

হকি খেলোয়াড়দের মধ্যে পৃথ্বীপালই প্রথম অর্জুন পুরস্কার পান ১৯৬১ সালে। পদ্মশ্রী ১৯৬৭ সালে। পাঞ্জাবের জারখর স্টেডিয়ামে ২০০৯ সালে তাঁর মূর্তি বসেছে।
চাকরি জীবন শুরু পাঞ্জাব পুলিশে, ১৯৫৬ সালে। কিন্তু বেশি দিন সেখানে ছিলেন না। ভারতীয় হকির গোষ্ঠী রাজনীতির জন্য ১৯৬৩ সালে ওই চাকরি ছেড়ে যোগ দেন রেলওয়েজে। ২ বছরেরে মধ্যেই রেলের সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে রেলওয়ে মিনিস্টার’স মেডেল পান। রেলের সেই চাকরিও একসময় ছেড়ে দেন। ১৯৬৮ সালে যোগ দেন লুধিয়ানায় পাঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওখানে একই সঙ্গে সামলাতেন দুটো দায়িত্ব। ডিরেক্টর অফ স্পোর্টস এবং ডিরেক্টর অফ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার। মৃত্যুর সময় পর্যন্ত ওই দুটো দায়িত্বই সামলেছেন।
আর্ম রেসলিংয়ের কোনও প্রতিযোগিতায় পৃথ্বীপাল কখনও নেমেছেন, এরকম তথ্য নেই। কিন্তু জোরালো পেনাল্টি কর্নার হিট নেওয়ার জন্য কবজির জোর ও দ্রুত মোচড় খুব দরকার হত। সেটা কাজে লাগিয়ে, তিনি যখন পাঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত, ছাত্রদের সঙ্গে আর্ম রেসলিংয়ে মেতে উঠতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিক্রিয়েশন রুমে সেই লড়াইয়ের বেশিরভাগই জিততেন পৃথ্বীপাল। বিখ্যাত Computer Scientist Jay Ranade নিউ ইয়র্কের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে ওঠার আগে অনেকটা সময়ই কাটিয়ে গিয়েছেন পাঞ্জাবের লুধিয়ানায়। তাঁর জন্মও ওই শহরে। রানাডের আরেকটা পরিচয় তিনি আর্ম রেসলিংয়ে চারবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ২ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মার্শাল আর্টসে। উচ্চ পর্যায়ের না হলেও আরও আগে ভারোত্তোলন করতেন। লুধিয়ানায় থাকার সময় পাঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিক্রিয়েশন রুমে পৃথ্বীপাল সিংয়ের কাছেই রানাডের আর্ম রেসলিংয়ে হাতেখড়ি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওখানে কাটিয়ে পৃথ্বীপালের কাছ থেকে কবজির জোর বাড়ানোর উপায় জেনে নিতেন।
No comments:
Post a Comment